Literature

বঙ্গবন্ধুর ভাবনা, নারী দিবস, আমার দেখা নয়াচীন এবং প্রাসঙ্গিকতা। 

নারীর  মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ছিলেন সচেতন।বঙ্গবন্ধুর  লেখা “আমার দেখা নয়াচীন” এর বিভিন্ন পাতায় উঠেছিল সেই সময়ের নারী সমাজের অবস্থা, সামসময়িক ভাবনা এবং নারী মুক্তির উপায়। বইয়ের পাতার কিছু অংশ  তুলে ধরলাম।
১৯৫২ সালে ‘পিস কনফারেন্স অব দি এশিয়ান অ্যান্ড প্যাসিফিক রিজিওনস’-এ তৎকালীন পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে পূর্ব বাংলার প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চীন গিয়েছিলেন আর যাওয়ার পথে বার্মা (মিয়ানমার) এবং হংকং হয়ে যেতে হয়েছিল। সেখানে যাত্রাবিরতির সময় তিনি  সমাজের অবস্থা, সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক-সামাজিক বিষয়গুলোও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। বিশেষ করে নারীর অর্থনৈতিক দৈন্যের বিষয়গুলো তিনি তাঁকে ব্যাতিত  করে।  
হংকংয়ে যাত্রাবিরতির সময় সেখানকার সমাজ ব্যবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে, 
‘এই মেয়েদের দোষ দিয়ে লাভ কি? এই সমাজ ব্যবস্থায় বাঁচবার জন্য এরা সংগ্রাম করছে, ইজ্জত দিয়ে পেটের ভাত জোগাড় করছে। হায়রে মানুষ! রাস্তায় রাস্তায় বহু মেয়েকে এইভাবে হংকং শহরে ঘুরতে দেখা যায়। …দেশের মালিক ইংরেজ, জনগণ না।’ 
তাঁর হৃদয় ব্যথিত হয়েছে নারীর এই দুর্দশা দেখে। হংকং তখন ইংরেজদের কলোনি ছিল। জনগণের হাতে ক্ষমতা ছিল না। সেখানকার জনগণ অবর্ণনীয় শোষণ-বঞ্চনার শিকার ছিল। তাই সরকারের যে দায়িত্ব রয়েছে মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করার- সে কথাই তিনি বারবার উল্লেখ করেছেন। সমাজের দায়বদ্ধতার কথা বলেছেন।
চীন ভ্রমণের সময় কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের সমান অংশগ্রহণ তাঁকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করেছিল। তিনি লিখেছেন,
 “নয়াচীনের মেয়েরা আজকাল জমিতে, ফ্যাক্টরিতে, কলকারখানাতে, সৈন্য বাহিনীতে দলে দলে যোগদান করছে। … যে সমস্ত ফ্যাক্টরি, কলকারখানা, সরকারি অফিসে আমি গিয়েছি, সেখানেই দেখতে পেয়েছি মেয়েরা কাজ করছে; তাঁদের সংখ্যা স্থানে স্থানে শতকরা ৪০ জনের উপরে।”
নয়াচীনের উন্নতির প্রধান কারণ পুরুষ ও মহিলা আজ সমানভাবে এগিয়ে এসেছে দেশের কাজে। সমানভাবে সাড়া দিয়েছে জাতি গঠনমূলক কাজে। তাই জাতি আজ এগিয়ে চলেছে উন্নতির দিকে।
চীনে শান্তি সম্মেলনের সময় তিনি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছেন। নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে তিনি লিখেছেন, 
‘আজ নয়াচীনে সমস্ত চাকুরিতে মেয়েরা ঢুকে পড়ছে। পুরুষদের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করছে। প্রমাণ করে দিয়েছে পুরুষ ও মেয়েদের খোদা সমান শক্তি দিয়েই সৃষ্টি করেছে। সুযোগ পেলে তারাও বৈজ্ঞানিক, ঐতিহাসিক, ডাক্তার, যোদ্ধা সকল কিছুই হতে পারে।’ 
ধর্মের নামে মেয়েদের ঘরে বন্দি করে রাখতে চায় এক দল। তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব উল্লেখ করেছেন,
‘মুসলিম দেশ তুরস্ক নারীর স্বাধীনতা স্বীকার করেছে। নারীরা সে দেশে যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছে। তুরস্কে অনেক মেয়ে পাইলট আছেন, যাঁরা দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ পাইলটদের মধ্যে অন্যতম। … আমাদের দেশের শিক্ষিত-অশিক্ষিত লোকের মনে এই ধারণা যে পুরুষের পায়ের নিচে মেয়েদের বেহেশত। পুরুষ যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। মেয়েদের নীরবে সব অন্যায় সহ্য করতে হবে বেহেশতের আশায়। তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে মেয়েদের নির্ভর করতে হয় পুরুষদের অর্থের উপর।’
ইসলাম ধর্ম নারীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে। মেয়েরা যে শুধু ঘরে আটকে থাকবে, বাইরে যাবে না, পরনির্ভরশীল বা পুরুষদের উপার্জনের ওপরই কেবল নির্ভরশীল থাকবে, তা কিন্তু নয়। বরং নবীজির যুগেও মেয়েদের যথেষ্ট স্বাধীনতা ছিল।নারীরা পুরুষের পাশাপাশি থেকে দায়িত্ব পালন করতেন, এমনকি রণাঙ্গনেও তাঁদের ভূমিকা ছিল। 
 ‘ ইসলামের ইতিহাস পড়লে জানা যায় যে, মুসলমান মেয়েরা পুরুষদের সাথে যুদ্ধক্ষেত্রে যেত, অস্ত্র এগিয়ে দিত। আহতদের সেবা-শুশ্রূষা করতো। হযরত রসুলে করিম (স:,-এর স্ত্রী হযরত আয়েশা নিজে বক্তৃতা করতেন। দুনিয়ায় ইসলামই নারীর অধিকার দিয়াছে।’ 
নারী নেতৃত্ব যাতে গড়ে ওঠে সেজন্য বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের সংবিধানে জাতীয় সংসদে নারীর জন্য সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা রাখেন। ১৯৭২ সালে মাত্র ৯ মাসের মধ্যে এই সংবিধান অর্থাৎ শাসনতন্ত্র তিনি রচনা করেন। নারীর অধিকার নিশ্চিত করার এক বিরল দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেন। যার ফলস্রুতিতে আজ সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ৫০ এ উন্নয়ত হয়েছে। 
একবিংশ শতাব্দীতে এসে আজ আমরা নারী সমাজ নিয়ে যা ভাবছি, বঙ্গবন্ধু সেটা অনুভব করেছিলেন সেই সময়ে। তার লেখায় একজন  সচেতন বাবা, দায়িত্ববান ভাই, অতি আপনজনের মনের আকুলতা প্রকাশ পেয়েছে। আর সেকারণে তিনিই জাতির পিতা। ১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধুর নারকীয় হত্যায় যেন  দেশের প্রতিটি পরিবার যেন  পিতৃহারা হয়েছিল, অন্ধকার নেমেছিল সোনার বাংলায়।  আজ  বঙ্গবন্ধুর দেখান পথেই নারী মুক্তির আলোক মশাল নিয়ে এগিয়ে চলছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। নারী পুরুষের সমান অধিকার, সমান অবদানে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ। জয় বাংলা


লেখকঃ
সাদরুল আহমেদ খান,
 সদস্য,
 বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপকমিটি।